Thursday, January 3, 2019

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা

জেনে নিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের ক্ষমতসমূহ -

★ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইন শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করার  সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোন অপরাধ যা কেবল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য,সে সকল বিষয়ে তার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে এই আইনের নির্ধারিত দন্ড আরোপ করতে পারবেন।
★তফসিলে বর্ণিত অপরাধ কোন্ আদালত বা ট্রাইবু্নাল কর্তৃক বিচার্য হবে তা উক্ত আইনে নির্ধারণ করা না থাকলে,ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ২৯ এর সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় তফসিলের অষ্টম কলাম অনুযায়ী নির্ধারিত আদালত কর্তৃক উক্ত অপরাধ বিচার্য বলিয়া গণ্য হইবে এবং যদি অনুরূপ কোন অপরাধ বিচার করিবার এখতিয়ার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের না থাকে, তাহা হইলে উক্ত অপরাধ, তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও, এই আইনের অধীন আমলে গ্রহণ করিয়া দন্ড আরোপ করিবার এখতিয়ার এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের থাকিবে না।

(৪) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি অনুরূপ কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এইরূপ মনে হয় যে, অপরাধ স্বীকারকারী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট।

অপরাধ এমন গুরুতর যে, এই আইনের অধীন নির্ধারিত দন্ড আরোপ করা হইলে উহা যথোপযুক্তদন্ডারোপ হইবে না, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে দন্ডআরোপ না করিয়া তাহার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করিবেন।

(৫) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি এইরূপ কোন অপরাধ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটবা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর সন্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হয়, যাহা সেশন আদালত কিংবা অন্য কোন উচ্চতর বা বিশেষ আদালত বা ট্রাইবু্যনাল কর্তৃক বিচার্য, তাহা হইলে মোবাইল কোর্টপরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্টব্যক্তির বিরম্নদ্ধে অভিযোগ এজাহার হিসাবে গণ্য করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিবেন।


ভ্রাম্যমান আদালত হলো ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিচারক কর্তৃক বিচারকার্য পরিচালনা এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিচারাদেশ প্রদান। ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট তার বিচারিক এখতিয়ার অনুযায়ী অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নিয়ে, উপস্থিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদেশ দিয়ে থাকেন। এটি একটি সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি। তবে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক প্রদত্ব বিচারাদেশের বিরূদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল রুজু করা যায়।
মাঠপর্যায়ে আইন-শৃংখলা রক্ষার মনিটরিং, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ, অবাধ নির্বাচন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য মূল্যে ভেজালমুক্ত পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিততকরণ, জুয়া প্রতিরোধ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, পরিকল্পিত নগরায়ন, মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জমি রক্ষা, নোটবই প্রতিরোধ, ভেজাল ঔষধ ও ভুয়া চিকিৎসক প্রতিরোধ, ওজনে কম দেওয়া প্রতিরোধ, সরকারি প্রয়োজনে ভূমি হুকুম দখল, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ, এসিড নিয়ন্ত্রণ, ধুমপান প্রতিরোধ, সুষ্ঠু সার ব্যবস্থাপনা, কৃষি জমি রক্ষা, শিশুশ্রম প্রতিরোধ, খেলার মাঠ উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, জনগনের সেবক সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা সনদ অনুযায়ী সেবা দিতে সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন কি না তার দায়বদ্ধতা, অসাধু ব্যক্তি সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছে কি না, সুষ্ঠু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্য কেউ অনিয়ম করলেও তার জন্য দায়ী থাকা ইত্যাদি

মোবাহল কোর্ট আহন, ২০০৯ এর ৮ ধারায় বলা হলো সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে যে দণ্ডই নির্ধারিত থাকুক না কেন, দুই বছর এর অধিক কারাদণ্ড এই আইনের অধীন আরোপ করা যাইবে না। আর সংশ্লিষ্ট অপরাধ গুলো হলো মোবাহল কোর্ট আহনের তফসিলি অপরাধ। বিডি ল’জ এ এখন পর্যন্ত ১০৯টি অপরাধ কে মোবাহল কোর্ট আহনের তফসিলি অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত দেখানো হয়েছে।
৬(৪) ধারায় বলা হলো অপরাধ স্বীকারকারী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট অপরাধ এমন গুরুতর যে, এই আইনের অধীন নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করা হইলে উহা যথোপযুক্ত দণ্ডারোপ হইবে না, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে দণ্ড আরোপ না করিয়া তাহার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করিবেন। কিন্ত কোন ক্ষেত্রে তা করা হয় না। ফলে সেসশন ট্রায়ালের মামলাও তারা যৎসামান্য কারাদন্ড দিয়ে অপরাধি কারাগারে পাঠাচ্ছেন। তফসিলি অপরাধের কারাদন্ড বা অপরাধের গুরুত্ব নির্বাহি ম্যাজি. বিবেচনায় না নিয়ে তারা জুডিসিয়ারির একটা সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যা মাষদার হোসেন মামলার টুয়েলভ ডিরেকশনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখানোর সমান


মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যে রায় প্রদান করেছেন তার বিরুদ্ধে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনে আপীল চলমান রয়েছে। সংবিধানের অভিভাবক এবং জাতির সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য আপীলেট ডিভিশন এ বিষয়ে যে মূল্যবান সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন তাই জাতির জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।



★★আইনগত সহায়তা পাওয়ার নিয়মাবলি★★

***আইনগত সহায়তা অর্থ- আর্থিক অসচ্ছল অথবা নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে আইনী সহায়তা প্রদান করা। যেমন- কোনো আদালতে দায়েরযোগ্য, দায়েরকৃত বা বিচারাধীন মামলায় আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান কিংবা মামলার প্রাসঙ্গিক খরচ প্রদানসহ অন্য যে কোনো সহায়তা প্রদান।

*** যারা আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন- কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক 75000টাকার উর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা,  বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মহিলা, পাচারের শিকার নারী বা শিশু,  এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু,  “আদর্শ গ্রাম”এ গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি, অসচ্ছল বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র নারী, শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তি এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী,  আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অসমর্থ ব্যক্তি,  বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, আদালত কর্তৃক বিবেচিত আর্থিকভাবে অসহায় কিংবা দরিদ্র কোনো ব্যক্তি, জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত আর্থিকভাবে অসহায় কিংবা দরিদ্র কোনো ব্যক্তি,  আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কোনো ব্যক্তি যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা পরিচালনা করতে অসমর্থ।

***আইনগত সহায়তা পাবার জন্য আবেদনঃ
আইনগত সহায়তা পাবার জন্য কোন ব্যক্তি তার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার কারণ উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে আবেদন বা দরখাস্ত করবেন।
*যে বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে তা যদি হাইকোর্ট অথবা সুপ্রীম কোর্টে বিচারের বিষয় হয় তাহলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর এবং অন্যান্য আদালতের বিচারের বিষয় হলে জেলা কমিটির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে।
* সংস্থা/কোনো জেলা কমিটি বরাবর সহায়তা পাবার জন্য আবেদনপত্র বা দরখাস্ত দাখিল করা হলে সংস্থা/জেলা কমিটি তাতে একটি নাম্বার দিয়ে আবেদনপত্রটির উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংস্থা/জেলা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবে।
*আবেদনপত্রে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে যদি সংস্থা/জেলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব না হলে আবেদনকারীকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহের জন্য পরামর্শ দিতে পারবে।
*সংস্থা বা জেলা কমিটির সভায় আবেদনপত্রটির আলোকে আইনগত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা সংস্থা বা জেলা কমিটি কর্তৃক আবেদনকারীকে জানানো হবে।

***যদি কোনো আবেদনকারীর আবেদন জেলা কমিটি কর্তৃক নাকচ হয় তাহলে সেটা মঞ্জুরীর জন্য ঐ আবেদনকারী তার আবেদন নাকচ হওয়ার তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে সংস্থার নিকট আপীল পেশ করতে পারবেন এবং এ ব্যাপারে সংস্থার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

                              ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন
সাধারণ সম্পাদক,  ব্লিয়াক
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
ঢাকা জজ কোর্ট
প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩,