Wednesday, February 6, 2019

মামলা দায়েরের পর প্রত্যাহার করতে চাই....

★★★জেনে নিন মামলা দায়েরের পর প্রত্যাহার করার নিয়ম ★★★

★আমাদের দেশে অনেক বিচারপ্রার্থীর নিকট এটা একটা সাধারণ প্রশ্ন যে আদালতে মামলা করার পর মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ আছে কি না?উত্তর হলো  আইন অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহার করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় জানা থাকা জরুরি।
★★★ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে :
ফৌজদারি মামলা সাধারণত দুই ধরনের : সি,আর ও জি,আর মামলা। সাধারণত জিআর মামলা থানায় দায়ের করা হয় আর সিআর মামলা দায়ের করতে হয় ফৌজদারি আদালতে।
জিআর মামলায় বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর বা রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি)। আর সিআর মামলাগুলোতে নালিশকারীকেই ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।কোনো মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব কিংবা মামলার পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার অন্য  কোন  কারণে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মামলা মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে দুই ধরনের বিধান রাখা আছে।
১)জি.আর মামলা প্রত্যাহার - যেসব জিআর মামলা রাষ্ট্র নিজেই পক্ষ, সেসব মামলায় পাবলিক প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা যায়।ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বা পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের অনুমতি নিয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত মোকদ্দমায়, সাধারণভাবে যেসব অপরাধে তাঁর বিচার হচ্ছে, তার যেকোনো এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে পরিচালনা থেকে সরে যেতে পারেন। অভিযোগনামা প্রণয়নের আগে সরে গেলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামির অব্যাহতি হবে; এবং অভিযোগ প্রণয়নের পর সরে গেলে অথবা এই আইন অনুসারে কোনো অভিযোগনামা প্রণয়ন করা প্রয়োজন না হলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামিকে খালাস দিতে হবে। মামলা পরিচালনা থেকে সরে যাওয়ার উপযুক্ত কারণ সম্পর্কে সরকারি বাদী আদালতকে সন্তুষ্ট করবেন। কেবল সরকারের তরফ থেকে মামলা থেকে সরে যাওয়ার আদেশ আদালত কর্তৃক অনুমতি প্রদানের জন্য যথেষ্ট কারণ হবে না।যেমন, মামলা প্রত্যাহারের আবেদন কেবল পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকেই হতে হবে। এজাহারকারী কিংবা আসামির আবেদন কিংবা সরকারের কোনো আদেশের বলে মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না এবং মামলা প্রত্যাহারের যুক্তিযুক্ত কারণ কৌঁসুলির পক্ষ থেকে আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেবল সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে আদালত মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেবে না।
মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মামলার ভুক্তভোগী, এজাহারকারী বা বাদী যদি মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক তাদের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে ক্ষেত্র বিশেষে দায়রা জজ আদালত কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে পারে।

২)সিআর মামলায় নালিশকারী বা তাঁর পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা অনুসারে। কোনো মামলার চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাদী যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারেন যে, তাঁকে নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়ার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে সেই নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেবেন এবং আসামিকে খালাস দেবেন। এই ধারাটি শুধু নিষ্পত্তিযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় আপোষযোগ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সে জন্য অভিযোগকারী এই ধারা অনুসারে নালিশ প্রত্যাহার করতে পারেন।

★★★দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে করণীয়  :
দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩ আদেশের ১ বিধি  অনুসারে মামলা হওয়ার পর যে কোনো সময় বাদী সকল বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। যে ক্ষেত্রে আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মোকদ্দমাটি ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং মামলার বিষয়বস্তুর জন্য কিংবা কোনো দাবির অংশের জন্য নতুনভাবে মোকদ্দমা করার জন্য বাদীকে অনুমতি দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত উপযুক্ত শর্তে বাদীকে তার মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে অথবা তার আংশিক দাবি পরিত্যাগ করার অনুমতি দিতে পারবেন এবং মোকদ্দমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বা আংশিক দাবি সম্পর্কে পুনরায় মোকদ্দমা করার অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।আদালতের অনুমতি ছাড়া যে ক্ষেত্রে বাদী মোকদ্দমা প্রত্যাহার করেন বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে বাদী আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোকদ্দমার খরচার জন্য দায়ী হবেন এবং ওই বিষয়বস্তু সম্পর্কে নতুনভাবে কোনো মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।এই নিয়মের কোনো বিধানবলে আদালত কয়েকজন বাদীর মধ্যে একজনকে অন্যান্য বাদীর সম্মতি ছাড়া মোকদ্দমা প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে পারেন না।সাধারণত প্রত্যাহারের পর একই বিষয়ে আর মামলা করা যায় না  তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সে ক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনর্তদন্তের নির্দেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় অপরাধগুলোকে আপসযোগ্যতার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে ১৭টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় কলামে উল্লিখিত ব্যক্তি আপস করতে পারবে। আর দ্বিতীয় ভাগে আছে আরো ৪৪টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কলামে উল্লিখিত ব্যক্তি আপস করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারার উল্লেখ নেই, এমন কোনো অপরাধ আপস করা যাবে না। বিশেষ আইনে উল্লিখিত অপরাধগুলোও আপসযোগ্য নহে হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি কোনো আপোসযোগ্য নহে অপরাধ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে আপস করা হয়, তাহলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ২১৩ ও ২১৪ ধারা আনুযায়ী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। মামলার যেকোনো পর্যায়েই আপসের ও মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।মামলা হাইকোর্ট বিভাগ বা সেশন কোর্টে আপিলরত অবস্থায় থাকলেও আপোষ করা যেতে পারে। মামলা আপোষ  করার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে রেহাই পেয়ে থাকে। এ কারণে কোনো মামলা একবার আপোস করা হলে পুনরায় একই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। তবে কোনো আপস যদি ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্ররোচণা বা জোরপূর্বক করা হয়, তবে তা আপস হিসেবে বিবেচিত হবে না। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা প্রত্যাহার করা হলে একই বিষয়ে আবার নতুন করে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি মামলার ‘রেস জুডিকাটা’ বা দোবারা নীতি এবং ফৌজদারি মামলার দোবারা সাজা নীতির আলোকে এ ধরনের মামলাকে বাধা দেওয়া হয়। তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সে ক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনঃতদন্তের নির্দেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতার অধীনে এ ধরনের আদেশ দেওয়ার সুযোগ আছে।

                               ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন(আমির)
                                        এডভোকেট,
                                  ঢাকা জজ কোর্ট
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,

1 comment:

  1. Onek thanks.

    Bangladesh ain e prenuptial agreement er bapare kichu jodi likhten details e.

    ReplyDelete