Wednesday, September 7, 2022

এফিডেভিট বিষয়ক ধারণা

এফিডেভিট
কি? এফিডেভিট ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হলফনামা। এফিডেভিট বা হলফনামা হল সত্যিকার অর্থে একটি লিখিত বিবৃতি যা স্বেচ্ছায় একজন ব্যক্তি জবানবন্দীর দ্বারা একটি শপথ বা অঙ্গীকারের মাধ্যমে করা হয় যা আইন দ্বারা এটি করার জন্য অনুমোদিত একজন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা হলো, একজন মানুষ তার পরিচয় পত্রের বা যে কোনো ধরনের পরিচিতির কোন প্রকারের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে চাইলে তাকে সেটি ঘোষণার মাধ্যমে সকলকে জানিয়ে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় লিখিত ভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এখন আমাদের পরিচিতি বলতে আমরা আমাদের নাম (যেমন আমার নাম তানবীর, আপনার নাম হয়ত মাহমুদা ইত্যাদি), ধর্ম (আমি মুসলিম, আপনি হয়ত খ্রিষ্টান ইত্যাদি), বংশ পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয়তা ইত্যাদিকে বুঝি। বৈবাহিক অবস্থানের ভিত্তিতেও আমাদের একটি পরিচিতি রয়েছে; যেমন আমি অবিবাহিত, আপনি বিবাহিত ইত্যাদি। এখন আমি বা আপনি যদি আমাদের এই পরিচিতিগুলোর কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে চাই, তাহলে সেটি শুধু মনে মনে বা মুখে মুখে করলে হবে না। কারণ, আমাদের পরিচিতি শুধুমাত্র আমাদের সাথেই সম্পৃক্ত নয়, বরং সেটি সমাজে আমাদের আশেপাশের সকলের সাথেই জড়িত। তাই, সেটি লিখিত ভাবে আইনানুগ প্রক্রিয়ার ঘোষণা দিতে হবে যাতে সকলেই অবগত থাকে এবং আমিও আমার এই পরিবর্তিত বা পরিবর্ধিত বা সংশোধিত পরিচয় বহন করতে এবং ব্যবহার করতে পারি। আরো সহজ করে যদি বলা যায়, পরিচিতির যে বিষয়গুলো পরিবর্তনযোগ্য সেগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হলে সেটি মৌখিক ভাবে না করে লিখিতভাবে আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াটিকেই আমরা এফিডেভিট বা হলফনামা বলে থাকে। যে বিষয়টি পরিবর্তন যোগ্য নয় সে বিষয়গুলো এফিডেভিট বা হলফনামা করেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কেন এফিডেভিড করতে হয়? নাম-পরিচয়, বংশ, ধর্ম, শিক্ষা, বৈবাহিক অবস্থান সহ পরিবর্তনযোগ্য বিষয়গুলো পরিবর্তন করতে হয় এফিডেভিট বা হলফনামার মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশী যে বিষয়ে এফিডেভিট বা হলফনামা হয়ে থাকে তা হল, পরিচয়পত্র বা সার্টিফিকেটে নাম সংশোধনের জন্য। নাম বলতে শুধু নিজের নাম নয়, পিতা মাতার নাম পরিবর্তনও সম্ভব। কিন্তু, বয়স পরিবর্তন সাধারণত এফিডেভিট দিয়ে সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, নাম পরিবর্তন/সংশোধনের সময় এফিডেভিট করার পর আবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচার করতে হবে; যা অন্যান্য এফিডেভিটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নয়। স্থাবর সম্পত্তি তথা জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের সময়। দলিল সম্পন্নের পাশাপাশি জমি ক্রয় বিক্রয়ের সময় জমি বিক্রয়ের বিষয়টি ঘোষণা দেওয়ার জন্য এফিডেভিট করতে হয়। বিবাহ করার সময় একে অন্যকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে থাকে, আর তা এফিডেভিটের মাধ্যমেও দেওয়া সম্ভব। আবার পক্ষান্তরে, তালাক দেওয়ার সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই, এই বলে দুইজন পৃথক হয়ে যায়; তখনও এফিডেভিটের মাধ্যমে ঘোষণা দিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু মামলা মোকদ্দমার সময়। সব মামলা নয়, দেওয়ানী কিছু মামলায় বাদী বিবাদীকে প্রতিকার চাওয়ার জন্য এফিডেভিটের মাধ্যমে বাদী হলে দরখাস্ত আর বিবাদী হলে জবাব দিতে হয়। ধর্ম পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এফিডেভিট করতে হয়। ধর্ম যদিও অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু জীবনে চলার পথে নিজের আইডেন্টিটি প্রচার বা প্রকাশ করতে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সামনে আনতে হয়। আর ছোটবেলায় যেহেতু সকলেই বাপদাদার ধর্মকেই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসে ঠাই দেই, তাই পরিচয়পত্রেও তাই লিখে থাকে। কিন্তু, সময়ের পরিবর্তনে যখন মানুষ তার ধর্ম পরিবর্তন করে, তখন জাতীয় পরিচয়সহ বাকি সকল জায়গায় নিজের ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তনের জন্য এফিডেভিটের মাধ্যমে তা ঘোষণা দিতে হবে। ধর্ম পরিবর্তনের সাথে সাথে যেহেতু নামেরও পরিবর্তন ঘটে, সেহেতু বিষয়টি একটু ইন্টারেস্টিং; ভবিষ্যতে কখন সময় পেলে চেষ্টা করবো সেটি নিয়ে বিশদ লিখতে সাথে সম্ভব হলে এফিডেভিটের একটি স্যাম্পল কপি দেখানো। আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোতে এফিডেভিট বা হলফনামা হয়ে থাকে; নির্ভর করছে কার কোন বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। নিজ নিজ প্রয়োজনে যেকোন ধরনের জরুরী ঘোষণাই কিন্তু আপনি এফিডেভিট বা হলফনামার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। কিভাব এভিডেভিট করবেন? এফিডেভিট বা হলফনামার মধ্যে আপনি যে বিষয়টি ঘোষণা দিবেন সেই বিষয়টি লেখার পরে, প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়ন করতে হবে। ধরুন আপনি কোন বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য এফিডেভিট বা হলফনামা করবেন সে ক্ষেত্রে আপনি সশরীরে নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গিয়ে যা লিখেছেন সেই বক্তব্যটি নিজে সত্যপাঠ করবেন। তারপর প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক সে বিষয়টি যাচাই বাছাই করতে হবে। অসত্য বা বেআইনি বিষয়ে এফিডেভিট করলে পরবর্তীতে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এফিডেভিটের বিষয়বস্তু যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করার পরে প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক সন্তুষ্ট হলে সেখানে স্বাক্ষর করবেন এবং সরকারি সিল ব্যবহার করে এর মধ্যে একটি ক্রমিক নাম্বার বসাবেন এবং ভবিষ্যতের ব্যবহার স্বার্থে বা প্রমাণ স্বরূপ একটি কপি নিজের কাছে রেখে দিবেন। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এফিডেভিট বা হলফনামা করার সময় বা অন্যের এফিডেভিট বা হলফনামা যাচাই করার সময় আদালতের সিলমোহর, ক্রমিক নাম্বার এবং তারিখ ঠিক আছে কিনা সেটা পরখ করে দেখা। এখন প্রশ্ন করা যায় যে, এফিডেভিট বা হলফনামা কত টাকার স্ট্যাম্পে করা যাবে? সাধারণত এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন করতে হয় ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পের মধ্যে দেখা যায় সাধারণত ১০০ টাকার ৩ টি ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কখনও কখনও আপনার যদি বেশী লেখার জন্য পৃষ্ঠা সংখ্যা বেশি লাগে সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আরো কম দামের ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, ৫০ টাকার ২ টির সাথে ১০০ টাকার ১টি ষ্ট্যাম্প মিলিয়েও ৩ পাতার এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন করতে পারবেন। মোটকথা, শুধু মাথা রাখতে হবে যত পৃষ্ঠাই হোক সব মিলিয়ে এফিডেভিট বা হলফনামাটি যেন ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে পরিণত হয়। তবে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পের পরিবর্তে ২০০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এফিডেভিট বা হলফনামা করতে হবে। উল্লেখ্য, আপনি নিজে বা আপনার সাথে যে বা যারা কোন ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এফিডেভিট বা হলফনামা প্রস্তুত করবেন, তার বা তাদের সকলের পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে এবং সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিতে হবে। একজন আইনজীবীর মাধ্যমে এফিডেভিট বা হলফনামাতে শনাক্ত করতে হবে যেখানে আইনজীবীকে আইনজীবী সমিতির সদস্য নাম্বার ও স্বাক্ষর দেওয়ার পাশাপাশি আইনজীবীর সামনেই এই এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment