Monday, April 22, 2019

পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে পারিবারিক সমস্যা নিরসন করতে চাইলে?




কোনো বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছে? ভাবছেন কী করবেন।কোনোভাবেই নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। যদি একেবারেই কোনোভাবে বিরোধটি নিষ্পত্তি করতে না পারেন তাহলে আপনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। পারিবারিক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই দেশে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।পারিবারিক আদালতে মূলত পাঁচটি পারিবারিক সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে -

১)বিবাহবিচ্ছেদ: বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সব সময় আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে ক্ষেত্রে কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে কেবল স্ত্রী আদালতে যেতে পারে। এ ছাড়া স্ত্রী যদি স্বামীকে ‘খোলা’ বা ‘মোবারাত’ বিচ্ছেদে সম্মত করাতে পারেন, সে ক্ষেত্রেও আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

২)দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার: কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন ব্যাহত হলে এবং সংসারে ফেরত না আসতে পারলে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

৩)মোহরানা: স্বামীর পরিশোধ না করা দেনমোহরের জন্য স্ত্রী মামলা করতে পারেন। তাৎক্ষণিক মোহরানার জন্য যে তারিখে তা দাবি করা হয় এবং অগ্রাহ্য করা হয়, সে তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে এবং বিলম্বে মোহরানার জন্য বিচ্ছেদ ঘটার তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

৪)ভরণপোষণ: স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে না চান, তাহলে স্ত্রী যেদিন থেকে ভরণপোষণের টাকা দাবি করবেন, সেদিন থেকে তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে।

৫)সন্তানের অভিভাবকত্ব: সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজত নিয়ে কোনো বিরোধ হলে পারিবারিক আদালতে যাওয়া যেতে পারে।

***কোন আদাালতে আশ্রয় নেবেন-

উভয় পক্ষ যেখানে বসবাস করে বা সর্বশেষ বসবাস করেছে এবং যে পারিবারিক আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। তবে বিবাহবিচ্ছেদ, মোহরানা ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে স্ত্রী বসবাস করেন, সেই এলাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। দেনমোহর বা ভরণপোষণের পরিমাণ যতই হোক, মামলা করা যাবে। পারিবারিক আদালতে আইন চর্চা করেন এমন একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হবে। পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নিতে হলে খুব বেশি কোর্ট ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার যারা পারিবারিক বিষয়ে কাজ করে তাদের আইনজীবীর মাধ্যমেও আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। পারিবারিক আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিলের বিধান থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকার কম মোহরানার ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল চলবে না। কোনো আবেদন পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আদালত বাদী ও বিবাদীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন। আদালত প্রয়োজনে রুদ্ধদ্বার কক্ষেও বিচারের ব্যবস্থা করতে পারেন।

*** আপস মীমাংসার সুযোগ-

পারিবারিক আদালতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। একবার মামলার বিচার শুরু হওয়ার আগে এক দফা এবং পরবর্তী সময়ে রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয় দফায় আপসের সুযোগ রয়েছে। তাই পারিবারিক বিষয়ে আদালতে গেলেও নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে নেওয়াই উচিত। আবার আপসমূলে আদালতের ডিক্রি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।


                                 ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন(আমির)
                                        এডভোকেট,
                                  ঢাকা জজ কোর্ট
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,


Monday, April 8, 2019

থানায় জিডি ও আপনার করণীয়




★★★জেনে নিন থানায় জিডি ও আপনার করণীয় সম্পর্কে     -

জিডি বা জেনারেল ডায়েরী হলো প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ির একটি নির্দিষ্ট  ডায়েরীতে ২৪ ঘন্টার খবর লিখে রাখা। এই ডায়েরীতে থানার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন -আসামী কোর্টে চালান দেয়া,থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগমন ও প্রস্থান, কোন কিছু হারিয়ে যাওয়া, কোন ধরণের হুমকি,ভয়ভীতি প্রদর্শন,মামলাযোগ্য নয় এমন কোন ঘটনা,অন্য কোন কারণে নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে কিংবা কোন অপরাধের আশঙ্কা করলে,ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।  এক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটি ডায়েরীতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন,প্রয়োজনবোধে তদন্ত করেন এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন এবং জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে বিষয়টি মামলা হিসেবে কোর্টে দায়ের করেন। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতে জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
★★ ★জিডিতে যে সকল বিষয় উল্লেখ করতে হবে:
১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে থানার নাম ও ঠিকানা,জিডির বিষয়,অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করলে আশঙ্কার কারণ, হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়,ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পরিচিত হলে তার নাম,পিতার নাম, ঠিকানাইত্যাদি, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম,ঠিকানা ইত্যাদি,অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে। এবং  জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন, সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হবে।
★★★অনলাইন জিডিঃ
পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র, ব্যাংকের চেকবই, সার্টিফিকেট বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারানো, বখাটে, মাদক সেবী বা অপরাধীদের আড্ডাস্থল বা অন্য কোন অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে তথ্য (তাৎক্ষনিক সাড়ার প্রয়োজন হলে মোবাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে সরাসরি ডিউটি অফিসার বা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হবে)।ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি, যখন নিরাপদ অবস্থানে বা তার আবাসস্থলে আছেন (ছিনতাইকারী গ্রেফতার বা মালামাল উদ্ধারের আশায় জরুরী বা তাৎক্ষনিক পুলিশী সাড়ার প্রয়োজন হলে ডিউটি অফিসার বা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলতে হবে। জনসাধারণের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা আছে এমন কোন অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে আগাম তথ্য।গৃহে পারিবারিক  দারোয়ান, কেয়ারটেকার, নৈশপ্রহরী নিয়োগ (বা পলায়ন) সম্পর্কে তথ্য। নতুন বা পুরোনো ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য। এজাতীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করা যেতে পারে বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স বা ই-মেইল করে জিডি করা যায়।অনলাইনে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা যায়।
ই-মেইল: bangladesh@police.gov.bd. ,ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৯৫৫৮৮১৮ ,অনলাইনে জিডি করার জন্য www.police.gov.bdসাইটে গিয়ে ‘Citizens help request’ –এ ক্লিক করে জিডি সম্পন্ন করা যায়।
সার্টিফিকেট হারানোর একটি জিডির নমুনা -

বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
...................... থানা
ডিএমপি, ঢাকা। 
বিষয়: এসএসসি সার্টিফিকেট হারানো সংবাদ ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন। 
মহোদয়,
আমি নিম্ন সাক্ষরকারী আপনার থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে জানাচ্ছি যে, আমার এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট আজ সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় ঢাকা কলেজের পাশের রাস্তার একটি ফটোকপি করার দোকান থেকে হারিয়ে গেছে। 
এমতাবস্থায় হারানোর বিষয়টি ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। 
সার্টিফিকেটের বিবরণ:
পরীক্ষার নাম...শিক্ষাবর্ষ...রেজিষ্ট্রেশন নং... রোল নং... 
বিনীত নিবেদক
............................... 

ঠিকানাঃ .................. 

মোবাইলঃ ০১.............
★★★জিডি সম্পর্কিত কিছু সাধারণ তথ্য -

১)জিডির দুটি কপি করা হয়। একটি থানায় সংরক্ষণ করা হয় এবং অন্যটি  জিডিকারীর নিকট  সংরক্ষণের জন্য দেয়া হয়।

২) অভিযোগকারী নিজে জিডি লিখতে পারেন, এবং প্রয়োজনে থানার কোন কর্মকর্তার দ্বারা ও লিখিয়ে নিতে পারেন। 

৩)জিডি করতে থানায় কোনো ফি দিতে হয় না।
   ★★★

সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।
শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন(আমির)

                                        এডভোকেট,

                                  ঢাকা জজ কোর্ট

প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।

            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,


Monday, February 18, 2019

ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে করণীয়...

জেনে নিন ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে কি করবেন-

***ব্ল্যাকমেইল -- আপনার ব্যক্তিগত এমন কোন তথ্য বা চিত্র যদি কারো কাছে থাকে যেটি প্রকাশ পেলে আপনার সামাজিক মান মর্যাদার হানি হবে এবং সেটি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কেউ যদি আপনাকে ইচ্ছার বিরূদ্ধে কোন কাজ করাতে চায় তাহাই ব্ল্যাকমেইল বলে গন্য করা হয়।
*** ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুনঃ
১)  মনে রাখবেন আপনার সাথে যা হচ্ছে তাতে আপনি অপরাধী নন,আপনি ভিকটিম,এটা আপনার কোন অপরাধ নয়, মাথা উঁচু রাখুন। আপনার অতীতকে আপনি পেছনে ফেলে এসেছেন, সেটাকে খুঁচিয়ে বের করে কোন কাপুরুষ, বর্বর যদি ফায়দা লুটতে চায় সেটা আপনার দোষ না।
২) দেশের প্রচলিত আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী যে কোন ধরণের ব্ল্যাকমেইল এক্সটরশন বা চাঁদাবাজি বলে গন্য হবে এবং  এর শাস্তি  তিন বছর পর্যন্ত  কারাদণ্ড, এবং জরিমানাদন্ড ও দিতে পারে। আর ইন্টারনেট/ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে চায় সেক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বা ICT (Amendment) Act-2013;অনুযায়ী ৭ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড সহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে পারে, এবং যা একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ।
৩) যখন বুঝতে পারবেন আপনি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন, ভয় না পেয়ে কাছের মানুষজনের সহায়তা নিন এবং  পরিবারকে জানান। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে দ্বিধা করেন। জেনে রাখুন, আপনার চরম দুঃসময়ে আপনার পরিবারই আপনার সবচাইতে বড় ভরসা। তাঁরা হয়তো আপনার অতীতের ভুলের কারণে কষ্ট পাবেন, কিন্তু এবং কিছু বকাঝকা করলে ও আপনার সাহায্যে তাঁরা এগিয়ে আসবেন এটা মোটামুটি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।
৪) কখনো মনের জোর হারাবেন না বা নিজেকে দোষ দেবেন না। ব্ল্যাকমেইলিং একটি জঘন্য অপরাধ, তথাকথিত সমাজ আপনাকে যতই ছোট করতে চাক না কেন আইন অনুযায়ী আপনি সহায়তা পাবেন। সমাজের মুখোশধারী মুরুব্বিদের চোখ-কপালে তোলাকে অগ্রাহ্য করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন, আইনের সহায়তা নিন।
                             এবং
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন

শেখ মোঃ আমির উদ্দীন(আমির)
সাধারণ সম্পাদক,  ব্লিয়াক
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩

Wednesday, February 6, 2019

মামলা দায়েরের পর প্রত্যাহার করতে চাই....

★★★জেনে নিন মামলা দায়েরের পর প্রত্যাহার করার নিয়ম ★★★

★আমাদের দেশে অনেক বিচারপ্রার্থীর নিকট এটা একটা সাধারণ প্রশ্ন যে আদালতে মামলা করার পর মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ আছে কি না?উত্তর হলো  আইন অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহার করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় জানা থাকা জরুরি।
★★★ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে :
ফৌজদারি মামলা সাধারণত দুই ধরনের : সি,আর ও জি,আর মামলা। সাধারণত জিআর মামলা থানায় দায়ের করা হয় আর সিআর মামলা দায়ের করতে হয় ফৌজদারি আদালতে।
জিআর মামলায় বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর বা রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি)। আর সিআর মামলাগুলোতে নালিশকারীকেই ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।কোনো মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব কিংবা মামলার পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার অন্য  কোন  কারণে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মামলা মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে দুই ধরনের বিধান রাখা আছে।
১)জি.আর মামলা প্রত্যাহার - যেসব জিআর মামলা রাষ্ট্র নিজেই পক্ষ, সেসব মামলায় পাবলিক প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা যায়।ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বা পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের অনুমতি নিয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত মোকদ্দমায়, সাধারণভাবে যেসব অপরাধে তাঁর বিচার হচ্ছে, তার যেকোনো এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে পরিচালনা থেকে সরে যেতে পারেন। অভিযোগনামা প্রণয়নের আগে সরে গেলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামির অব্যাহতি হবে; এবং অভিযোগ প্রণয়নের পর সরে গেলে অথবা এই আইন অনুসারে কোনো অভিযোগনামা প্রণয়ন করা প্রয়োজন না হলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামিকে খালাস দিতে হবে। মামলা পরিচালনা থেকে সরে যাওয়ার উপযুক্ত কারণ সম্পর্কে সরকারি বাদী আদালতকে সন্তুষ্ট করবেন। কেবল সরকারের তরফ থেকে মামলা থেকে সরে যাওয়ার আদেশ আদালত কর্তৃক অনুমতি প্রদানের জন্য যথেষ্ট কারণ হবে না।যেমন, মামলা প্রত্যাহারের আবেদন কেবল পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকেই হতে হবে। এজাহারকারী কিংবা আসামির আবেদন কিংবা সরকারের কোনো আদেশের বলে মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না এবং মামলা প্রত্যাহারের যুক্তিযুক্ত কারণ কৌঁসুলির পক্ষ থেকে আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেবল সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে আদালত মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেবে না।
মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মামলার ভুক্তভোগী, এজাহারকারী বা বাদী যদি মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক তাদের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে ক্ষেত্র বিশেষে দায়রা জজ আদালত কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে পারে।

২)সিআর মামলায় নালিশকারী বা তাঁর পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা অনুসারে। কোনো মামলার চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাদী যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারেন যে, তাঁকে নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়ার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে সেই নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেবেন এবং আসামিকে খালাস দেবেন। এই ধারাটি শুধু নিষ্পত্তিযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় আপোষযোগ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সে জন্য অভিযোগকারী এই ধারা অনুসারে নালিশ প্রত্যাহার করতে পারেন।

★★★দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে করণীয়  :
দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩ আদেশের ১ বিধি  অনুসারে মামলা হওয়ার পর যে কোনো সময় বাদী সকল বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। যে ক্ষেত্রে আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মোকদ্দমাটি ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং মামলার বিষয়বস্তুর জন্য কিংবা কোনো দাবির অংশের জন্য নতুনভাবে মোকদ্দমা করার জন্য বাদীকে অনুমতি দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত উপযুক্ত শর্তে বাদীকে তার মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে অথবা তার আংশিক দাবি পরিত্যাগ করার অনুমতি দিতে পারবেন এবং মোকদ্দমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বা আংশিক দাবি সম্পর্কে পুনরায় মোকদ্দমা করার অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।আদালতের অনুমতি ছাড়া যে ক্ষেত্রে বাদী মোকদ্দমা প্রত্যাহার করেন বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে বাদী আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোকদ্দমার খরচার জন্য দায়ী হবেন এবং ওই বিষয়বস্তু সম্পর্কে নতুনভাবে কোনো মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।এই নিয়মের কোনো বিধানবলে আদালত কয়েকজন বাদীর মধ্যে একজনকে অন্যান্য বাদীর সম্মতি ছাড়া মোকদ্দমা প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে পারেন না।সাধারণত প্রত্যাহারের পর একই বিষয়ে আর মামলা করা যায় না  তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সে ক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনর্তদন্তের নির্দেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় অপরাধগুলোকে আপসযোগ্যতার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে ১৭টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় কলামে উল্লিখিত ব্যক্তি আপস করতে পারবে। আর দ্বিতীয় ভাগে আছে আরো ৪৪টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কলামে উল্লিখিত ব্যক্তি আপস করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারার উল্লেখ নেই, এমন কোনো অপরাধ আপস করা যাবে না। বিশেষ আইনে উল্লিখিত অপরাধগুলোও আপসযোগ্য নহে হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি কোনো আপোসযোগ্য নহে অপরাধ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে আপস করা হয়, তাহলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ২১৩ ও ২১৪ ধারা আনুযায়ী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। মামলার যেকোনো পর্যায়েই আপসের ও মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।মামলা হাইকোর্ট বিভাগ বা সেশন কোর্টে আপিলরত অবস্থায় থাকলেও আপোষ করা যেতে পারে। মামলা আপোষ  করার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে রেহাই পেয়ে থাকে। এ কারণে কোনো মামলা একবার আপোস করা হলে পুনরায় একই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। তবে কোনো আপস যদি ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্ররোচণা বা জোরপূর্বক করা হয়, তবে তা আপস হিসেবে বিবেচিত হবে না। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা প্রত্যাহার করা হলে একই বিষয়ে আবার নতুন করে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি মামলার ‘রেস জুডিকাটা’ বা দোবারা নীতি এবং ফৌজদারি মামলার দোবারা সাজা নীতির আলোকে এ ধরনের মামলাকে বাধা দেওয়া হয়। তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সে ক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনঃতদন্তের নির্দেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতার অধীনে এ ধরনের আদেশ দেওয়ার সুযোগ আছে।

                               ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন(আমির)
                                        এডভোকেট,
                                  ঢাকা জজ কোর্ট
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,

Monday, January 28, 2019

জেনে নিন চেক সংক্রান্ত সমস্যা ও আপনার করণীয় সম্পর্কে-


**চেক সংক্রান্ত সমস্যায় আপনার করণীয় **
বর্তমানে অর্থ লেনদেনের বড় মাধ্যম ব্যাংক। আর ব্যাংক লেনদেনের প্রায় গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত চেক। চেক দিয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়,চলুন জেনে নেই এই ধরণের কিছু সমস্যার সমাধান-
*চেক হারিয়ে গেলে করণীয় :
চেক হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ব্যাংকের মাধ্যমে চেক স্টপ করাতে হয়। হারানো চেক উদ্ধারের জন্য মামলাও করা যায়। যে কোনো ব্যাংক প্রদত্ত চেক বই হারিয়ে গেলে বিষয়টি নিকটস্থ থানায় জিডি করে সেটার সত্যায়িত কপি হিসাবধারী ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট শাখায় উপস্থিত হয়ে জমা দিয়ে একটি নতুন চেক বই ইস্যু করার জন্য লিখিত অনুরোধপত্র দাখিল করবেন।
শাখার কোনো মূল্যবান গ্রাহকের ক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক ব্যক্তিগতভাবে চেক হারানোর বিষয়ে সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে থানায় জিডি এন্ট্রির এবং ব্যক্তিগত উপস্থিতির শর্ত শিথিল করা হয়ে থাকে।
*চেক ডিজঅনার হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় :
চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা একাউন্টে না থাকলে ব্যাংকের পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না এবং চেক প্রত্যাখ্যান করা হয় যা চেক ডিজঅনার হওয়া নামে পরিচিত। চেক ডিজঅনার হওয়া চেকের বাহক একাউন্টধারী নিজে হলে সেটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে, একাউন্টধারী অন্য কাউকে চেক লিখে দিলেন এবং সেটি ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হলো তবে সেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
*চেক নিয়ে প্রতারিত হলে করণীয় :
পাওনাদারের নিকট হতে যদি চেকের মাধ্যমে প্রতারিত হন, তাহলে চাইলেই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। চেক ডিজঅনারের ক্ষেত্রে কিছু সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে আর প্রতিকার পাওয়া যায় না। যেকোনো চেক ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন না করলে চেকটির কার্যকারিতা আর থাকে না।তবে
চেক নিয়ে প্রতারিত হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে মামলা দায়ের করতে না পারলে দণ্ডবিধির ৪০৬ এবং ৪২০ ধারা অনুসারে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়। তবে এক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
*মামলার বিচারের স্থান ও প্রক্রিয়া:
চেকটি যে ব্যাংকে ডিজঅনার হয়েছে, সেই ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই আদালতে মামলা  করতে হবে।
তবে এ অপরাধের মূল বিচার হবে দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত ইচ্ছা করলে যুগ্ম দায়রা আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হয়।
এক. চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ক্যাশ করার জন্য জমা দিতে হবে।
দুই. চেক ডিজঅনার হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হয়। আর ত্রিশ দিনের মধ্যে দাবি না জানালে সেটি আইনের দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হয় না।
তিন. সরাসরি প্রাপক বরাবর অথবা তার সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ব্যবস্থাসহ রেজিস্টার্ড ডাকে নোটিশ পাঠাতে হয়। এছাড়া যদি সম্ভব না হয়,অন্তত একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হয়। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হবে। এ ধরনের নোটিশ জারি ও মামলা করার জন্য আপনি একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে পারেন।
*চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি:
চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি হচ্ছে, এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সেই আদালতে জমা দিতে হবে। একাউন্টধারী চেকে উল্লিখিত অর্থের ৫০ ভাগ পরিশোধ করতে সক্ষম না হলে আপিল করা যায় না।
*প্রতারণার মামলা - ‘কজ অব এ্যাকশন' নষ্ট  কিংবা চেকের মেয়াদ চলে গেলেও দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ইত্যাদি ধারায় প্রতারণার মামলা করা যায়। ৪০৬ ধারাটি জামিন অযোগ্য হয়। দন্ডবিধির উক্ত ধারা ২ (দুই)টি যে কোন প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
                             ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।
এডভোকেট শেখ মো: আমির উদ্দিন (আমির)
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
ঢাকা জজ কোর্ট
প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩,

Monday, January 14, 2019

★★★জেনে নিন মামলায় জামিন সংক্রান্ত আইন ও আপনার অধিকার সম্পর্কে  ★★★

★★★ জামিন - দেশের নাগরিক হিসেবে কোন ব্যক্তি যে অপরাধই করুক না কেন ন্যায়বিচার পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। কোন ব্যক্তি শুধু গ্রেপ্তার হলেই তাকে অপরাধী বলা যায়না,যতক্ষণ না মামলার সার্বিক বিচার কার্যক্রম শেষ হয় এবং আদালত কর্তৃক অপরাধী ঘোষিত হয়।  হলেই । মামলার  সার্বিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা ও অপরাধ প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত জেল খানার বাইরে অবস্থান করাই জামিন বলে গন্য হয়ে থাকে। কোন ব্যাক্তি  মামলায় আসামী হিসেবে  জড়িয়ে পড়লে আদালতে উপস্থিত হয়ে তাকে জামিন নিতে হয়। জামিন সাধারণত  দুই ধরনের -১) আগাম জামিন এবং ২) অন্তর্বর্তীকালীন  জামিন।

 ★★★আগাম জামিন - যখন কোনো ব্যক্তিকে  গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা গ্রেপ্তার হওয়ার অনুমান করা হয় তখন কোনো ব্যাক্তি আদালতে জামিনের আবেদন করলে তখন উক্ত ব্যক্তিকে যে জামিন দেওয়া হয় তাকে Anticipatory Bail বা আগাম জামিন বলে। এই জামিনে অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতারের আগেই আদালত থেকে জামিন নিতে পারেন। জামিনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে হাইকোর্টের/ দায়রা আদালতের একান্ত এখতিয়ার অনুযায়ী এ ধরনের জামিন দেওয়া হয়। যখন কোনো ব্যক্তির নিকট বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, তিনি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট/দায়রা বিভাগে আবেদন করলে আদালত যদি যথাযথ মনে করেন তাহলে সেই মুহূর্তে উক্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত রাখার জন্য আগাম জামিনের নির্দেশ দিতে পারেন।
আগাম জামিন অনুমোদন করার জন্য আইনের বিধানে কোনো নির্দিষ্ট ধারা নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারাকে ব্যাখ্যা করে পরবর্তীকালে আগাম জামিন দেওয়া আদালত অব্যাহত রাখেন । তাই আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।

★★★অন্তর্বর্তীকালীন  জামিন-  কারাগারে আটক অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত যে জামিন নেওয়া হয় তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বলে।কোনো ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত কারাগার থেকে বের হতে হলে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জামিনের জন্য কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে তাঁকে গ্রেফতার হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁকে জামিন আবেদন করতে হয়। জামিন নামঞ্জুর হলে দায়রা জজ এবং জেলা জজ আদালতে আসতে হয়। সেখানেও জামিন নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে হয়। হাইকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হলে সর্বশেষ ভরসা আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এর প্রতিটি ধাপের যে কোনো একটি আদালতে জামিন হলে তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন।
 
★★★জামিন পাওয়ার পর করণীয় -
কোন ব্যক্তি আদালত কর্তৃক জামিন পাওয়ার পর তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ বা শর্ত বা বাধ্যবাধকতা থাকে, আর এ বিধিনিষেধগুলো না মানলে বাতিল হতে পারে জামিন।
ফৌজদারি মামলা হতে পারে থানায় এজাহারের মাধ্যমে। হতে পারে আদালতে সরাসরি আবেদনের মাধ্যমেও। জিডি থেকেও মামলা হতে পারে। যদি থানায় মামলা হয়, তাহলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে হাইকোর্ট বিভাগ থেকেও আগাম জামিন চাওয়া যায়। তবে সাধারণত আগাম জামিন মঞ্জুর হয় কয়েক সপ্তাহের জন্য। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। আদালতে সরাসরি মামলা হলে আদালত সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার সুযোগ আছে।
যদি পুলিশ গ্রেপ্তার করে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠাবে। তখন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চাইতে হবে। নিম্ন আদালতে কয়েক দিন পরপর জামিন চাওয়া যায়। যদি নিম্ন আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন, তখন দায়রা আদালতে জামিন চাইতে হয়। দায়রা আদালত জামিন না দিলে হাইকোর্ট বিভাগে জামিন আবেদন করতে  হয়।তবে জামিন যেভাবেই হোক না কেন  কিছু শর্ত অবশ্যই মানতে হবে ।

★★★যা যা মানতে হবে -
জামিন আগাম, অন্তর্বর্তীকালীন কিংবা স্থায়ী হোক—জামিন পাওয়ার পর মেনে চলতে হবে নিয়ম। আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন মানে এই নয় যে মামলা থেকে মুক্তি মিলেছে। জামিন পাওয়ার পর বাধ্যবাধকতা হচ্ছে নির্ধারিত প্রতিটি তারিখে আদালতে হাজিরা দেওয়া। কোনোভাবেই হাজিরা থেকে বিরত থাকা যাবে না। যদি অসুস্থতা বা যৌক্তিক কারণে আদালতে হাজির না থাকা যায়, তাহলে নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করতে হবে। জামিন পাওয়ার পর কোনোভাবে প্রতিপক্ষকে হুমকি-ধমকি দেওয়া যাবে না। মামলার কোনো সাক্ষীকে প্রলোভন বা কোনো ভয়ভীতি দেখানো যাবে না।প্রতিপক্ষ বা সাক্ষীকে হুমকি-ধমকি দিলে এবং প্রতিপক্ষরা আদালতে অবগত করলে জামিন বাতিল হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে টাকা আত্মসাতের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আদালত বলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ যদি আসলেই টাকা পায়, টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। যৌতুক-সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায় অভিযুক্ত পক্ষ আপস-মীমাংসার শর্তে জামিন চান। সে ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি আপস-মীমাংসা কিংবা তাঁর দেনমোহর বা ভরণপোষণের টাকা পাওয়ার শর্তে রাজি থাকেন, তাহলে স্বামীকে জামিনে আপত্তি নাও করতে পারেন। তবে অভিযুক্তকে শর্তগুলো মানতে হবে।যদিও আইনের চোখে এমন কোনো শর্তে জামিন দেওয়ার কোনো স্পষ্ট বিধান নেই। জামিনপ্রাপ্ত হলে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের পূর্বানুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক মামলায় দেখা যায়, আদালত পাসপোর্ট জব্দ করেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট নিজের জিম্মায় এনে বিদেশ যেতে হবে। বিদেশ গেলেও আদালতে ধার্য্য তারিখে আইনজীবীর মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে।আইনে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে মওকুফ চাওয়া যায় এবং আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেওয়া যায়। বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির জন্য আবেদন করতে পারেন মামলার মূল বিচার শুরু হওয়ার আগে। এ ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন কি না, তা জেনে নিতে হবে। আইনজীবী যদি হাজিরা না দেন, তাহলেও জামিন বাতিল হতে পারে। মনে রাখা জরুরি, জামিন পাওয়ার পর বিচারের সব স্তরে আদালতে যেতে হবে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। নিজে নির্দোষ হলে উপযুক্ত সাক্ষী দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে জামিন পাওয়ার পর জামিন বাতিল হলে এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। আইনের চোখে পলাতক ব্যক্তির অধিকারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।


                               ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন
সাধারণ সম্পাদক,  ব্লিয়াক
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
ঢাকা জজ কোর্ট
প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩,

Thursday, January 3, 2019

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা

জেনে নিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের ক্ষমতসমূহ -

★ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইন শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করার  সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোন অপরাধ যা কেবল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য,সে সকল বিষয়ে তার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে এই আইনের নির্ধারিত দন্ড আরোপ করতে পারবেন।
★তফসিলে বর্ণিত অপরাধ কোন্ আদালত বা ট্রাইবু্নাল কর্তৃক বিচার্য হবে তা উক্ত আইনে নির্ধারণ করা না থাকলে,ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ২৯ এর সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় তফসিলের অষ্টম কলাম অনুযায়ী নির্ধারিত আদালত কর্তৃক উক্ত অপরাধ বিচার্য বলিয়া গণ্য হইবে এবং যদি অনুরূপ কোন অপরাধ বিচার করিবার এখতিয়ার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের না থাকে, তাহা হইলে উক্ত অপরাধ, তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও, এই আইনের অধীন আমলে গ্রহণ করিয়া দন্ড আরোপ করিবার এখতিয়ার এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের থাকিবে না।

(৪) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি অনুরূপ কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট এইরূপ মনে হয় যে, অপরাধ স্বীকারকারী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট।

অপরাধ এমন গুরুতর যে, এই আইনের অধীন নির্ধারিত দন্ড আরোপ করা হইলে উহা যথোপযুক্তদন্ডারোপ হইবে না, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে দন্ডআরোপ না করিয়া তাহার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করিবেন।

(৫) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি এইরূপ কোন অপরাধ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটবা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর সন্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হয়, যাহা সেশন আদালত কিংবা অন্য কোন উচ্চতর বা বিশেষ আদালত বা ট্রাইবু্যনাল কর্তৃক বিচার্য, তাহা হইলে মোবাইল কোর্টপরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্টব্যক্তির বিরম্নদ্ধে অভিযোগ এজাহার হিসাবে গণ্য করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিবেন।


ভ্রাম্যমান আদালত হলো ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিচারক কর্তৃক বিচারকার্য পরিচালনা এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিচারাদেশ প্রদান। ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট তার বিচারিক এখতিয়ার অনুযায়ী অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নিয়ে, উপস্থিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদেশ দিয়ে থাকেন। এটি একটি সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি। তবে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক প্রদত্ব বিচারাদেশের বিরূদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল রুজু করা যায়।
মাঠপর্যায়ে আইন-শৃংখলা রক্ষার মনিটরিং, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ, অবাধ নির্বাচন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, ন্যায্য মূল্যে ভেজালমুক্ত পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিততকরণ, জুয়া প্রতিরোধ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, পরিকল্পিত নগরায়ন, মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জমি রক্ষা, নোটবই প্রতিরোধ, ভেজাল ঔষধ ও ভুয়া চিকিৎসক প্রতিরোধ, ওজনে কম দেওয়া প্রতিরোধ, সরকারি প্রয়োজনে ভূমি হুকুম দখল, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ, এসিড নিয়ন্ত্রণ, ধুমপান প্রতিরোধ, সুষ্ঠু সার ব্যবস্থাপনা, কৃষি জমি রক্ষা, শিশুশ্রম প্রতিরোধ, খেলার মাঠ উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, জনগনের সেবক সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা সনদ অনুযায়ী সেবা দিতে সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন কি না তার দায়বদ্ধতা, অসাধু ব্যক্তি সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছে কি না, সুষ্ঠু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্য কেউ অনিয়ম করলেও তার জন্য দায়ী থাকা ইত্যাদি

মোবাহল কোর্ট আহন, ২০০৯ এর ৮ ধারায় বলা হলো সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে যে দণ্ডই নির্ধারিত থাকুক না কেন, দুই বছর এর অধিক কারাদণ্ড এই আইনের অধীন আরোপ করা যাইবে না। আর সংশ্লিষ্ট অপরাধ গুলো হলো মোবাহল কোর্ট আহনের তফসিলি অপরাধ। বিডি ল’জ এ এখন পর্যন্ত ১০৯টি অপরাধ কে মোবাহল কোর্ট আহনের তফসিলি অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত দেখানো হয়েছে।
৬(৪) ধারায় বলা হলো অপরাধ স্বীকারকারী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট অপরাধ এমন গুরুতর যে, এই আইনের অধীন নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করা হইলে উহা যথোপযুক্ত দণ্ডারোপ হইবে না, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে দণ্ড আরোপ না করিয়া তাহার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করিবেন। কিন্ত কোন ক্ষেত্রে তা করা হয় না। ফলে সেসশন ট্রায়ালের মামলাও তারা যৎসামান্য কারাদন্ড দিয়ে অপরাধি কারাগারে পাঠাচ্ছেন। তফসিলি অপরাধের কারাদন্ড বা অপরাধের গুরুত্ব নির্বাহি ম্যাজি. বিবেচনায় না নিয়ে তারা জুডিসিয়ারির একটা সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যা মাষদার হোসেন মামলার টুয়েলভ ডিরেকশনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখানোর সমান


মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে অবৈধ ঘোষণা করে যে রায় প্রদান করেছেন তার বিরুদ্ধে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনে আপীল চলমান রয়েছে। সংবিধানের অভিভাবক এবং জাতির সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য আপীলেট ডিভিশন এ বিষয়ে যে মূল্যবান সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন তাই জাতির জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।



★★আইনগত সহায়তা পাওয়ার নিয়মাবলি★★

***আইনগত সহায়তা অর্থ- আর্থিক অসচ্ছল অথবা নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে আইনী সহায়তা প্রদান করা। যেমন- কোনো আদালতে দায়েরযোগ্য, দায়েরকৃত বা বিচারাধীন মামলায় আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান কিংবা মামলার প্রাসঙ্গিক খরচ প্রদানসহ অন্য যে কোনো সহায়তা প্রদান।

*** যারা আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন- কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক 75000টাকার উর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা,  বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মহিলা, পাচারের শিকার নারী বা শিশু,  এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু,  “আদর্শ গ্রাম”এ গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি, অসচ্ছল বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র নারী, শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তি এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী,  আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অসমর্থ ব্যক্তি,  বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, আদালত কর্তৃক বিবেচিত আর্থিকভাবে অসহায় কিংবা দরিদ্র কোনো ব্যক্তি, জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত আর্থিকভাবে অসহায় কিংবা দরিদ্র কোনো ব্যক্তি,  আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কোনো ব্যক্তি যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা পরিচালনা করতে অসমর্থ।

***আইনগত সহায়তা পাবার জন্য আবেদনঃ
আইনগত সহায়তা পাবার জন্য কোন ব্যক্তি তার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার কারণ উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে আবেদন বা দরখাস্ত করবেন।
*যে বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে তা যদি হাইকোর্ট অথবা সুপ্রীম কোর্টে বিচারের বিষয় হয় তাহলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর এবং অন্যান্য আদালতের বিচারের বিষয় হলে জেলা কমিটির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে।
* সংস্থা/কোনো জেলা কমিটি বরাবর সহায়তা পাবার জন্য আবেদনপত্র বা দরখাস্ত দাখিল করা হলে সংস্থা/জেলা কমিটি তাতে একটি নাম্বার দিয়ে আবেদনপত্রটির উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংস্থা/জেলা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবে।
*আবেদনপত্রে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে যদি সংস্থা/জেলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব না হলে আবেদনকারীকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহের জন্য পরামর্শ দিতে পারবে।
*সংস্থা বা জেলা কমিটির সভায় আবেদনপত্রটির আলোকে আইনগত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা সংস্থা বা জেলা কমিটি কর্তৃক আবেদনকারীকে জানানো হবে।

***যদি কোনো আবেদনকারীর আবেদন জেলা কমিটি কর্তৃক নাকচ হয় তাহলে সেটা মঞ্জুরীর জন্য ঐ আবেদনকারী তার আবেদন নাকচ হওয়ার তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে সংস্থার নিকট আপীল পেশ করতে পারবেন এবং এ ব্যাপারে সংস্থার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

                              ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন
সাধারণ সম্পাদক,  ব্লিয়াক
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
ঢাকা জজ কোর্ট
প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩,